ঋতুপর্ণা দেবনাথ রঙ
সামাজিক অবক্ষয় রোধ কিংবা দেশের সংস্কৃতি তথা ঐতিহ্য রক্ষায় শিল্পের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য। শিল্প প্রথমত শিল্পীর জীবনেরই বহিঃপ্রকাশ, সেখানে ফুটে ওঠে নানান অধ্যায়। যার ব্যাপ্তীও অফুরান সুবিস্তৃত। শিল্পীসত্তার বিকাশ শৈশব থেকেই। অতঃপর কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে এবং বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন পড়তে একের পর এক নিজেকে আবিষ্কার তথা অত্মোপলব্ধি করেন শিল্পী। শিল্প তাই শিল্পীরই জীবন খুঁটে দেখা। এখানে জীবন আর কর্ম অভিন্ন।
সম্প্রতি গ্যালারি চিত্রকে একক চিত্র প্রদর্শনী করলেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক। শিল্পী সুমন ওয়াহেদের কিউরেশনে ‘ফিরে দেখা’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীতে শিল্পীর বিগত পঞ্চাশ বছরের বাছাই করা কাজগুলোই মূলত তুলে ধরা হয়েছিল। প্রদর্শনীর শিরোনামটি অনেকটা নষ্টালজিক। ভারী দরজা ঠেলে আমরাও হয়তো ফিরি সেই পঞ্চাশ বছরের যাত্রায়। শিল্পীর সমান্তরালে হেঁটে দেখি তার ভাবনা, দর্শন।
শিল্পী মোস্তাফিজুল হকের জীবনদর্শন তার চিত্রকর্মেই প্রচ্ছন্ন এবং স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। বোঝা যায়, তার চারপাশের পরিবেশ তাকে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছে নিজেকে এক অনন্য শিল্পী হিসেবে দাঁড় করাতে। প্রকৃতি ও পরিবেশের উপাদানই মানুষ, গাছ, প্রাণী, জল, আকাশ, মেঘ ইত্যাদি। এখান থেকেই বোধ করি শিল্পীর ক্যানভাসের এই গল্প।
মোস্তাফিজুল হককে বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে তার ঘটনাবহুল প্রাঞ্জল শৈশবে। আমরা ভাবতে পারি, এক দুরন্ত বালকের কথা। বাগেরহাটের খোলা এক মাঠ, সেখানে দাপিয়ে বেড়াতে বেড়াতে হয়তো বালক প্রথম কোনো একদিন একটি পাখি দেখে অবাক হলো, কিংবা খড়ের গাদার রং অথবা নোনা বাতাসের গন্ধে ভরা ঘন নীল আকাশ তার ভাবনার পালে হাওয়া দিলো। উপরন্তু বাড়িতেও এক আঁকিয়ে আবহ, বড় ভাইটিও ছবি আঁকেন। বালক শিল্পী মোস্তাফিজুল হকের শুরু বোধ করি ওই আবহেরই কারণে। পরে তার বড় ভাই শিল্পী মাহমুদুল হকের সাফল্যও তাকে শিল্পযাত্রায় ব্যাপক অনুপ্রাণিত করেছিল।
দেশের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে সদ্য উঠে দাঁড়ানোর যে সময়টি, ১৯৭৩ সালের সে সময়ে দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে তরুণ বয়সে মোস্তাফিজুল হক সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। পুলকিত হই এই ভেবে, একই জায়গায় পড়াশোনার সৌভাগ্য আমাদেরও হওয়ার দরুণ তার ছাত্রজীবনটি কল্পনা করে নিতে পারি কিছুটা হলেও। জলরঙের বর্ষটিতে আমরা যেমন কাঁধে রং-তুলি নিয়ে ক্লাসে গিয়ে আঁকতাম ‘স্টিল লাইফ কম্পোজিশন’, তিনিও এঁকেছিলেন। তবে সে ছবিগুলো পরিপক্বতা পেয়ে গিয়েছিল ওইটুক সময়েই। তাই ১৯৭৫ সালে আঁকা তার একটি স্টিল লাইফে চোখ আটকে যায়; সাহসী স্ট্রোক আর ওয়াশে আঁকা, জলরঙের স্বচ্ছ বৈশিষ্ট্যটি বিদ্যমান।
এই সময়টিতে বন্ধুরা মিলে দলগত চিত্র প্রদর্শনী করেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, শিশু চিত্রকলার সাথে যুক্ত হন তিনি। জলরঙের পাশাপাশি তেলরঙে তার দক্ষতা দেখা যায় পরের কাজগুলোয়। ছবি আঁকা চর্চার সময়কালে ‘আউটডোর স্টাডি’র বেশ প্রয়োজন পড়ে। মূলত আলো-ছায়ার ব্যবহার। মোস্তাফিজুল হকের ছাত্রজীবনে করা কেবল দুটো তেলরঙের ছবির দিকে তাকালেও বোঝা যায়, তেলরঙে আলো-ছায়ার ব্যবহার তিনি সূক্ষ্মভাবে করেছেন। ‘কুমার বাড়ি (১৯৮০)’ সিরিজের দুটো কাজের দিকে তাকালেই কেমন যেন মনে হয় অলস এক দুপুর, কড়কড়ে হলদে আলো, মুরগিগুলো চড়ে বেড়াচ্ছে, আর এখনি বুঝি ঘরের ওপাশ থেকে বেড়িয়ে আসবে কেউ। ভারী রং, স্প্যাচুলার ব্যবহারে রং প্রয়োগের নজির মেলে তার তেলরঙের চিত্রে।
শিল্পীর জীবন, মনন আর চিন্তা বদলাতে থাকে সময়ের সাথে সাথে ৷ প্রথমদিকে তৈরি করা এরপর নিজ হাতে ফর্মগুলো ভাঙা, এই ধারায় হেঁটেছেন অনেক অনেক শিল্পী। মূলত শিল্প কেবল সৌন্দর্য অবধিই নয় বরং এই সৌন্দর্য আর অভিব্যক্তির মাঝে তৈরি হয় নূতন একটি বিষয়, যা নিয়ে যায় আরও গভীরে, গতিশীলতার দিকে। সেখান থেকে তৈরি হয় নতুন ফর্ম, ভেঙেচুরে মিলে যায় সেসব। ব্র্যাক আর পিকাসোর কিউবিজমের দিকে তাকালে এটি বোঝা বোধ করি কিছুটা সহজ হয়। শিল্পী মোস্তাফিজুল হকের জলরং আর দৃঢ় তেলরঙের পরপরই ১৯৮৫ থেকে তার কাজে ফর্ম নিয়ে এই ভাঙা-গড়ার শৈল্পিক দিকটি দেখা যেতে থাকে। যেন হিউম্যান ফিগারকে ভেঙে, নানান গড়নে আংশিক বিমূর্ততার দিকে নিয়ে যাওয়া, কিংবা বলা যায় আরও ‘স্বাধীন’ করে দেওয়া? কিন্তু শিল্পী মোস্তাফিজুলের যাপিত জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, তিনি নানান দিকের কর্মব্যস্ততায় সদিচ্ছায় জড়িয়ে আছেন, তিনি তো স্বাধীনই ছিলেন। তবে যাপিত জীবনের বাইরে গিয়ে অন্য বাস্তবতায় নিজের কাজকে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে? নিজের এক নূতন জগৎ তৈরি? যেখানে পুনরাবৃত্তি নয় বরং দেখার জায়গা তৈরি হয়ে ওঠে আরও অনেক অনেক!
একের পর এক পুরস্কার, নকশাবিদদের অধিকার নিয়ে কাজ, শিশুদের চিত্রকলা তো আছেই। পাশাপাশি নতুন একটি শিল্পী সংগঠনের সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। ‘ফিরে দেখা’তে এসে চিত্রকলার ক্রমবিকাশের সাথে দেখতে হয় জীবনের অলিগলিও; যেখান থেকে প্রতিটি কাজের সূত্রপাত। নানান ব্যস্ততার মাঝে শিল্পীর নিজের ছবি আঁকায় এ সময়ে একটু ভাটা পড়ে। কিন্তু হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে কাজ শুরু করেন আবার। আটাশি সালের বন্যা নিয়ে একটি কাজ করলেন তিনি, যেখানে বিমূর্ত ভাবে একটি পানিবন্দি খাঁচার পাখি; যেন মানুষেরই হাহাকার। প্রতীকীরূপে দুর্যোগকে আঁকার এই যে প্রবণতা, এই ২০২০ সালেও এসেও শিল্পীর কাজে তা দৃশ্যমান।
‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনীটিতে ‘নিহঙ্গা’ ধারার বেশ কিছু কাজ দেখা যায়। মূলত ১৯৯১ সালে তিনি যখন জাপানে পড়াশোনার জন্য যান, এই ঐতিহ্যবাহী নিহঙ্গা মাধ্যমে তখন থেকে চর্চা শুরু করেন। নিহঙ্গা মাধ্যমটি মূলত ওয়াশি কাগজে বিভিন্ন খনিজ পাথরের গুড়া আর খরগোশের খুড়ের আঠার মিশ্রণ। ১৯৯২ সালে আঁকা ‘Young girl in the sea shore’ ছবিটি এ মাধ্যমে করা। তার জলরঙের পারদর্শিতার সাথে নূতন এই নিহঙ্গা মাধ্যম মিলেমিশে সাগরের পাড়ের তরুণীর ছবিটি অন্যতম। পাথর, জল আর গায়ের অর্ধস্বচ্ছ জামার রং যেন মিলেমিশে গেছে। দেখতে কিছুটা ‘গোয়াশ’র মতো মনে হলেও পরে নিহঙ্গা মাধ্যমে করা ‘My Pleasure’ সিরিজটি শিল্পীর এ মাধ্যমে পারদর্শিতার বেশ পরিষ্কার ধারণা দেয়।
মোস্তাফিজুল হক বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেন চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগে। শিশুচিত্রকলার দিকটিতেও মনোযোগ দিলেন আরও বেশি। শিশুদের জন্য অনেক কাজের মাঝে সবচেয়ে মজার যে কাজটি বলে আমার ধারণা, তা হলো অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকা। অর্থাৎ বর্ণমালার ছবি। আমাদের শিশুদের জন্য সঠিক বর্ণমালা শিক্ষার বইয়ের অভাবই বলা চলে, এখনো সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে সত্যজিতের সেই কয়েকটি রঙে করা ‘হাতেখড়ি’। তবে এ ক্ষেত্রে হিসেবটা উল্টো। এখানে ‘অ’ দিয়ে ম্যাডোনা আঁকা হচ্ছে, ‘ই’ এঁকে একটানে বাইসন। এ ধারার বেশ কিছু বিদেশি বই থাকলেও আমাদের দেশে খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে শিল্পী যে একটি মা-শিশু, প্যাঁচা, গরু, কুকুর তথা প্রকৃতির সমস্ত উপাদানে ‘রেখা’ দেখতে পান, এই চর্চা তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।
রেখার প্রসঙ্গে চলে যেতে হয় ১৯৯৮ সালের দিককার কাজে। মূলত ১৯৯৫-২০১০ সময়কালে শিল্পী নানান ধরনের পরীক্ষামূলক কাজ করেছেন। ‘Illusion in Figure’ এ রেখার মাধ্যমে ক্যানভাসে বিমূর্ত ভাবে এঁকেছেন নানান অবয়ব। কখনো এখানে নারীমূর্তিটি মূল প্রতিনিধি মনে হলেও অন্য অবয়বগুলোও ডোমিনেটিং হয়ে ওঠে। মোস্তাফিজুল হকের কাজ নিয়ে বলা হয়ে থাকে, তিনি ক্যানভাসে রঙের সাথে রঙের যুদ্ধ ঘটান। আসলেই তাই। ইল্যুশান ইন ফিগারেও ক্যানভাস খনন করে তিনি অবয়বগুলো এঁকেছেন, আবার তারও ভেতরে অন্তর্নিহিত আছে আরও সব উপাদান। এই লাইন ওয়ার্কে উজ্জ্বল রঙের কাজ তার আরও কিছু কাজে দেখা যায়। বিমূর্ততার মাধ্যমে ছবি বলার বিষয়টি তো ক্রমেই নানান দিক পাচ্ছিল; তবে তার সঙ্গে ধীরে ধীরে যুক্ত হতে লাগলো সরলীকরণ। তার প্রমাণ আমরা পাই শিল্পীর ২০০৮-২০০৯ সময়কালের কাজে।
আবারও ফেরা যাক শিল্পীর ছবিতে প্রকৃতির প্রাধান্যতে। শিল্পী সতর্কভাবে যখন সরলীকরণের দিকে এগোচ্ছেন, তখন ক্যানভাসে ফর্মের সংঘর্ষ কমে এলো, বরং রঙের একটা বোঝাপড়া, নেগেটিভ স্পেসিং আসতে লাগলো আরও বেশি।
তবে মোস্তাফিজুল হকের কাজে প্রবলভাবে যে নূতন আঙ্গিক এলো, তা হলো প্রাণীকে কাজের বিষয় হিসেবে নেওয়া। ২০১০ সালের দিকে তিনি বিষয় হিসেবে বেছে নিলেন ঘোড়া। একযুগ পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই নানা ভঙ্গিতে আঁকছেন এই বিষয় নিয়ে। এত তীক্ষ্ম সে ঘোড়ার গতি, কোনাকোনিভাবে যেন বেরিয়ে আসবে ক্যানভাস থেকে। শিল্পী নিজ মুখেই বলেছিলেন, ঘোড়ার যে গতিশীলতা, তা তিনি নিজের জীবন থেকে দেখতে পান। তবে ওই যে রঙের সংঘর্ষ? অথবা কোনো একটি ঘোড়ার গা থেকে একটু বেরিয়ে আসা মাংসপিণ্ডের মতো লাল রং? সেসবের অণুপ্রেরণা কী? অথবা শিল্পী যদি আঁকতে গিয়ে তীব্রতা তীক্ষ্মতা বোঝাতে এ রং দেন, যদি কোনো এক জগতের তীব্র জেদ এসে চেপে বসে আঁকার সময়ে, তারও প্রতিফলন যদি হয় এসব দৃঢ় অভিব্যক্তির প্রকাশ, সেটিও আমাদের কাছে যৌক্তিক। তবে শিল্প যুক্তিই বা কতটুকু মানে? এই পঞ্চাশ বছরের ফিরে দেখায় শিল্পীর জীবন থেকে যুক্তি আর সময়ের আবেগের হিসেব না করে বরং কাটাকুটি করে মিলিয়ে দিলেই ভালো।
এরপরে বিশ্বজুড়ে নেমে এলো অতিমারি করোনা। আমরা আটকা পড়ে গেলাম। অথবা একাকিত্বে জড়িয়ে পড়লাম। একাকিত্ব থেকে হতাশা আসে ঠিক, তবে আরও একটি বিষয় আসতে পারে, উদযাপন! সৃষ্টি!
মোস্তাফিজুল হকের ২০২০ সালের যে নব্য আঙ্গিকের সৃষ্টি, তার মূল কারণ হিসেবে এদগার দেগার মতো করে বলতে হয়, ‘He must need to sink himself into solitude.’ দিনের পর দিন ঘরবন্দি, অথচ কদিন আগেই ব্যস্ততায় ডুবে থাকা হতো। এই ভাবতে ভাবতে নিজের স্টুডিওতে গেলেন শিল্পী। ছাদের ওপর একটা ঘর, চারপাশে তীক্ষ্মভাবে শোনা যায় কাক-চিলের শব্দ। রাস্তায় অবাধে ঘুরে বেড়ায় কুকুর-বেড়াল। অথচ মানুষরা রয়েছে বন্দি হয়ে! তবে মূলত স্বাধীন কারা? আমরা তো নই। আমরা বরং উদযাপন করতে পারি এই প্রাণীদের স্বাধীনতাকে। শিল্পীও তাই করলেন। চারকোনা ক্যানভাসে মূলত তুলি রং দিয়ে আটকালেন না শকুন অথবা কাক; বরং ওদের মুক্তিতেই আমাদের ছাপ। আইভরি ব্ল্যাক আর গাঢ় ঘন নীলে আঁকা শকুন আর কাক যেন আমাদের ইশারা দিচ্ছে মহামারির ভবিষ্যতকে। লাল চোখ দেখলে গা কেঁপে ওঠে, ছড়ানো পালকগুলো কি আমাদেরই দুর্দশা? তবে মুক্তির ছবি? শিল্পী তা-ও আঁকলেন। লাল রঙের প্রতিনিধিত্বে আঁকলেন ভোরে সবার আগে ডেকে ওঠা মোরগের ছবি। পাখনাগুলো এত তীব্র স্ট্রোক, যেন সুদিনকে শিল্পী টেনে নিয়ে আসছেন যত দ্রুত সম্ভব। সম্ভাবনা আর সমকালীন দুর্যোগকে পাখি কিংবা প্রাণী দিয়ে প্রকাশের ভঙ্গিমা শিল্পীর কাজে আগেও দৃশ্যমান ছিল। পাখির ছবিকে প্রতীকী হিসেবে এঁকেছেন পরিতোষ সেন, কামরুল হাসানও। তবে এই দুঃসময়ে আঁকা মোস্তাফিজুল হকের ছবিগুলো আমরা যেন আরও বেশি মেলাতে পারি নিজেদের জীবনের সাথে।
ফিরে দেখা নামক প্রদর্শনীতে প্রায় ৫০টির মতো যে চিত্রকর্ম, তা বুঝতে শেখায় শিল্পীর সমকালীন চিন্তা আর এত বছরের পথটিকে। তারচেয়ে বেশি শেখায় প্রশ্ন করতে। কেন? কীভাবে? আমাদের এই কৌতূহল বজায় থাক। শিল্পী মোস্তাফিজুল হক বর্ষীয়ান সংগঠকও। তিনি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. ইমামুল কবির শান্তর হাত ধরেই আজ থেকে এক দশক আগে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম সৃজনশীল বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিসহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও একাডেমি। শিল্পী ও তার বড় ভাই শিল্পী মাহমুদুল হক নিজের বাড়ি রামপালে ‘মাহমুদ মোস্তাফিজ সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরি’ করেছেন। সেখানে গিয়ে দুই ভাই অনেক কাজ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু করোনায় বড় ভাই না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় সে স্বপ্ন পূরণ না হলেও শিল্পী একাই অবশিষ্ট কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন বিরামহীন। তার প্রকৃতির সঙ্গে নতুন বাস্তবতা তৈরির যাত্রা আরও দীর্ঘ হোক, নতুন ধারার সৃষ্টি হোক, এ কামনাই সর্বান্তকরণে।
লেখক: অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সূএ: জাগোনিউজ২৪.কম